Dhaka ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা না জানিয়ে সমালোচনার মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি।

স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ কেফায়েত উল্লাহ শরীফ
  • Update Time : ০১:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
  • / ৮৩ Time View

জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা না জানিয়ে সমালোচনার মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি।

 

স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ কেফায়েত উল্লাহ শরীফ

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেননি পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক। পাশাপাশি বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার জানানোর জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনারেও অংশ নেননি জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা। এর আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতেও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বিষয়টিকে বীর শহীদদের প্রতি এসপির অশ্রদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (২৬ মার্চ) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা শহরের ফারুকী পার্কস্থ স্মৃতিসৌধে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও দিবসের সূচনা করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলমের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পর রীতি অনুযায়ী জেলা পুলিশ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পুলিশের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইকবাল হোছাইন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ওবায়দুর রহমানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

 

এ সময় পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক স্মৃতিসৌধের সামনে উপস্থিত থাকলেও তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেননি। এরপর গার্ড অব অনারের মাধ্যমে বীর শহীদদের শ্রদ্ধান জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোছাইন। সেখানেও এসপি এহতেশামুল অংশ নেননি।

এর আগে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসেও শহীদ মিনারে ফুল দেননি পুলিশ সুপার এহতেশামুল। তখন তিনি শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যদিও রীতি অনুযায়ী অধিনস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়েই পুলিশ সুপার শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তবে পরপর দুইটি জাতীয় দিবসে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পুষ্পস্তবক অর্পণ না করায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে পুলিশ সুপার শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন না। এজন্য অধিনস্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আব্দুন নূর বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাকে আইন মানতেই হবে। ধর্মীয়বোধ হচ্ছে ভিন্ন বিষয়। যদি ধর্মীয় কারণে তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ না করে থাকেন, তাহলে তার চাকরিতে থাকা উচিত না। জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন না করে পুলিশ সুপার রাষ্ট্রের আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি।

 

জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রত্যেকেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে পালন করা উচিত।

শ্রদ্ধা নিবেদন না করার কারণ জানতে মুঠোফোনে কল করলে পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক বলেন, অফিসে আসেন, মোবাইলে বলা যাবে না। রোজার মাসের পরে আসেন, চা খেতে-খেতে বলা যাবে।

 

এ বিষয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে আমরা জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে গিয়ে থাকি, পুষ্পস্তবক অর্পণ করি। এটা এভাবেই হয়ে আসছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা না জানিয়ে সমালোচনার মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি।

Update Time : ০১:৩১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা না জানিয়ে সমালোচনার মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি।

 

স্টাফ রিপোর্টার: মোঃ কেফায়েত উল্লাহ শরীফ

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেননি পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক। পাশাপাশি বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার জানানোর জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনারেও অংশ নেননি জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা। এর আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতেও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বিষয়টিকে বীর শহীদদের প্রতি এসপির অশ্রদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (২৬ মার্চ) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা শহরের ফারুকী পার্কস্থ স্মৃতিসৌধে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও দিবসের সূচনা করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলমের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পর রীতি অনুযায়ী জেলা পুলিশ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পুলিশের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইকবাল হোছাইন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ওবায়দুর রহমানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

 

এ সময় পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক স্মৃতিসৌধের সামনে উপস্থিত থাকলেও তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেননি। এরপর গার্ড অব অনারের মাধ্যমে বীর শহীদদের শ্রদ্ধান জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোছাইন। সেখানেও এসপি এহতেশামুল অংশ নেননি।

এর আগে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসেও শহীদ মিনারে ফুল দেননি পুলিশ সুপার এহতেশামুল। তখন তিনি শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যদিও রীতি অনুযায়ী অধিনস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়েই পুলিশ সুপার শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তবে পরপর দুইটি জাতীয় দিবসে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পুষ্পস্তবক অর্পণ না করায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে পুলিশ সুপার শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন না। এজন্য অধিনস্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আব্দুন নূর বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাকে আইন মানতেই হবে। ধর্মীয়বোধ হচ্ছে ভিন্ন বিষয়। যদি ধর্মীয় কারণে তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ না করে থাকেন, তাহলে তার চাকরিতে থাকা উচিত না। জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন না করে পুলিশ সুপার রাষ্ট্রের আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি।

 

জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রত্যেকেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে পালন করা উচিত।

শ্রদ্ধা নিবেদন না করার কারণ জানতে মুঠোফোনে কল করলে পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক বলেন, অফিসে আসেন, মোবাইলে বলা যাবে না। রোজার মাসের পরে আসেন, চা খেতে-খেতে বলা যাবে।

 

এ বিষয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে আমরা জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে গিয়ে থাকি, পুষ্পস্তবক অর্পণ করি। এটা এভাবেই হয়ে আসছে।