Dhaka ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই শিক্ষকের ভরসায় চলছে কালিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিয়মিত না আসা শিক্ষক নিয়ে উত্তপ্ত অভিভাবকরা

জহির শাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:০৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৪৩ Time View

 

জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ১৫৫ নম্বর কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাব এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা ১৬০ জন নিষ্পাপ শিশুর পড়াশোনাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সরকারি নিয়মে এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক দরকার, কিন্তু বাস্তবে মাত্র দুজনের কাঁধে চলছে সবকিছু। ফলে ক্লাসগুলোতে শিক্ষা নয়, বিশৃঙ্খলা চলছে, আর অভিভাবকদের মনে জমছে তীব্র ক্ষোভ যা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে পড়তে পারে। এই সংকট শুধু এই স্কুলের নয়, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক শিক্ষক শূন্যতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যেখানে হাজার হাজার পদ ফাঁকা পড়ে আছে এবং শিশুরা তার খেসারত দিচ্ছে।
স্কুল সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে শিক্ষকের ঘাটতি চলছে, যা পাঠদানকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। সম্প্রতি বদলি হয়ে আসা শিক্ষক ইমরান হোসেন ২৫ সেপ্টেম্বর যোগদান করলেও তিনি স্কুলে আসেন না, বরং উপজেলা শিক্ষা অফিসে সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন। এতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিন্টু মিয়া এবং আরেকজন শিক্ষককে একাই সব দায়িত্ব সামলাতে হয়। প্রধান শিক্ষক যখন প্রশাসনিক কাজে অফিসে যান, তখন একজন শিক্ষককে তিনটি শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে নিতে হয়, যা শিক্ষার মানকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। শিশুরা বই খুলে বসে থাকে, কিন্তু পড়া হয় না, স্বপ্নগুলো ধুলোয় মিশে যায়।
অভিভাবকরা এই অবস্থায় ফুঁসে উঠেছেন। রাজীব আহছান বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, কিন্তু শিক্ষা পায় না। নতুন শিক্ষক যোগ দিয়েও আসেন না, এটা তো অন্যায়। ভবিষ্যত্ কি অন্ধকার করে দেবে এরা?” রহমতউল্লাহ এবং শাহিন আহমেদও একই কথা বলেন, “সন্তানদের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। আমরা চুপ করে থাকব না।” এই ক্ষোভ শুধু কালিপুরের নয়, সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধুঁকছে, যেমন নবীনগরের অন্যান্য স্কুলেও অনুরূপ সমস্যা দেখা যায়।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিন্টু মিয়া বলেন, “সংকটটা খুব গুরুতর। একজন শিক্ষক অফিসে ব্যস্ত থাকায় সব চাপ আমাদের ওপর পড়ে। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছি, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।” ইমরান হোসেন নিজেই স্বীকার করেন, “উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশে অফিসে কাজ করছি, কিন্তু এটা নিয়মের বাইরে।” নবীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “অফিসে লোকের অভাবে সাময়িকভাবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দ্রুত সমাধান করব।”
এই ঘটনা প্রশ্ন তোলে, কেন সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া এত ধীরগতির? সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২ হাজারের মতো প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত নিয়োগের। কিন্তু কালিপুরের মতো স্কুলে সেই নির্দেশ কি পৌঁছেছে? শিশুরা অপেক্ষা করতে পারে না, তাদের ভবিষ্যত্ এখনই গড়তে হবে। অভিভাবকরা বলছেন, আর দেরি নয়, সমাধান চাই। এই সংকট যদি না মেটে, তাহলে শিক্ষা কেবল কাগজের লাইন হয়ে থাকবে, আর শিশুরা হারাবে তাদের আলো।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

দুই শিক্ষকের ভরসায় চলছে কালিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিয়মিত না আসা শিক্ষক নিয়ে উত্তপ্ত অভিভাবকরা

Update Time : ০৭:০৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

 

জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ১৫৫ নম্বর কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাব এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা ১৬০ জন নিষ্পাপ শিশুর পড়াশোনাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সরকারি নিয়মে এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক দরকার, কিন্তু বাস্তবে মাত্র দুজনের কাঁধে চলছে সবকিছু। ফলে ক্লাসগুলোতে শিক্ষা নয়, বিশৃঙ্খলা চলছে, আর অভিভাবকদের মনে জমছে তীব্র ক্ষোভ যা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে পড়তে পারে। এই সংকট শুধু এই স্কুলের নয়, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক শিক্ষক শূন্যতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যেখানে হাজার হাজার পদ ফাঁকা পড়ে আছে এবং শিশুরা তার খেসারত দিচ্ছে।
স্কুল সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে শিক্ষকের ঘাটতি চলছে, যা পাঠদানকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। সম্প্রতি বদলি হয়ে আসা শিক্ষক ইমরান হোসেন ২৫ সেপ্টেম্বর যোগদান করলেও তিনি স্কুলে আসেন না, বরং উপজেলা শিক্ষা অফিসে সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন। এতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিন্টু মিয়া এবং আরেকজন শিক্ষককে একাই সব দায়িত্ব সামলাতে হয়। প্রধান শিক্ষক যখন প্রশাসনিক কাজে অফিসে যান, তখন একজন শিক্ষককে তিনটি শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে নিতে হয়, যা শিক্ষার মানকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। শিশুরা বই খুলে বসে থাকে, কিন্তু পড়া হয় না, স্বপ্নগুলো ধুলোয় মিশে যায়।
অভিভাবকরা এই অবস্থায় ফুঁসে উঠেছেন। রাজীব আহছান বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, কিন্তু শিক্ষা পায় না। নতুন শিক্ষক যোগ দিয়েও আসেন না, এটা তো অন্যায়। ভবিষ্যত্ কি অন্ধকার করে দেবে এরা?” রহমতউল্লাহ এবং শাহিন আহমেদও একই কথা বলেন, “সন্তানদের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। আমরা চুপ করে থাকব না।” এই ক্ষোভ শুধু কালিপুরের নয়, সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধুঁকছে, যেমন নবীনগরের অন্যান্য স্কুলেও অনুরূপ সমস্যা দেখা যায়।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিন্টু মিয়া বলেন, “সংকটটা খুব গুরুতর। একজন শিক্ষক অফিসে ব্যস্ত থাকায় সব চাপ আমাদের ওপর পড়ে। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছি, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।” ইমরান হোসেন নিজেই স্বীকার করেন, “উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশে অফিসে কাজ করছি, কিন্তু এটা নিয়মের বাইরে।” নবীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “অফিসে লোকের অভাবে সাময়িকভাবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দ্রুত সমাধান করব।”
এই ঘটনা প্রশ্ন তোলে, কেন সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া এত ধীরগতির? সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২ হাজারের মতো প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত নিয়োগের। কিন্তু কালিপুরের মতো স্কুলে সেই নির্দেশ কি পৌঁছেছে? শিশুরা অপেক্ষা করতে পারে না, তাদের ভবিষ্যত্ এখনই গড়তে হবে। অভিভাবকরা বলছেন, আর দেরি নয়, সমাধান চাই। এই সংকট যদি না মেটে, তাহলে শিক্ষা কেবল কাগজের লাইন হয়ে থাকবে, আর শিশুরা হারাবে তাদের আলো।