ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে তুচ্ছ ঘটনায় ভয়াবহ সংঘর্ষ
- Update Time : ০৭:৪৬:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ৩৬ Time View
জহির শাহ্ , ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি , ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় একটি সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতে ছোট দেওয়ানপাড়া এবং হাওলাপাড়া গ্রামের মধ্যেকার এই ভয়াবহ সংঘাতে অন্তত ৩০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপে রাতভর চলা পরিস্থিতি অবশেষে নিয়ন্ত্রণে এলেও, এলাকায় এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার দুপুরে। হাওলাপাড়া গ্রামের কয়েকজন যুবক ছোট দেওয়ানপাড়া গ্রামের একটি পুকুরে গোসল করতে গেলে স্থানীয় যুবকদের সাথে তাদের বচসা হয়। পুকুরটি সাধারণত ছোট দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দারা ব্যবহার করে থাকেন এবং বহিরাগতদের প্রবেশে বিধিনিষেধ থাকে। এই বাধার জের ধরে প্রথমে হাতাহাতি এবং পরবর্তীতে মারধরের ঘটনা ঘটে।
যদিও দুপুরের ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে মিটে গিয়েছিল, কিন্তু এর রেশ ধরে দুই গ্রামের মধ্যে চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গ্রাম্য কোন্দল এবং পূর্ব শত্রুতার পটভূমিতে এই পুকুরের ঘটনা যেন বারুদে আগুন দেওয়ার মতো কাজ করে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পুকুরের বিরোধটি কেবল একটি অজুহাত, আসল কারণ হলো দুই গ্রামের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের রেষারেষি।
সন্ধ্যা নামতেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যায়। দুই গ্রামের শত শত বাসিন্দা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, যার মধ্যে টেঁটা, বল্লম, লাঠি, সড়কি এবং ইট-পাটকেল অন্তর্ভুক্ত, নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হয়। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। অন্ধকারে লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য সংঘর্ষকারীরা টর্চলাইট ব্যবহার করে, ফলে যুদ্ধক্ষেত্রসদৃশ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বহু লোক আহত হন। আহতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ অনেকে বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতদের অনেকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশিরভাগই ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে জখম। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারফ হোসাইন এবং পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় মধ্যরাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ইউএনও মোশারফ হোসাইন জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নতুন করে সংঘাত এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে এবং উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রশাসন শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে জমির দখল, পুকুর বা জলাশয় নিয়ে এই ধরনের তুচ্ছ ঘটনা প্রায়শই বড় সংঘাতের জন্ম দেয়। স্থানীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং সচেতনতার অভাবকে এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ঘটনা আবারও গ্রামীণ কোন্দল নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়ভাবে মধ্যস্থতা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরল।









